top of page
Writer's pictureAtverts Production

Be What you wish to be


At Pen:



"Be What you wish to be"

--Rituparno Ghosh,Chitrangada: The Crowning Wish(2012)


গল্পটার শুরু হয়েছিল প্রায় ৮০'র দশকে।সদ্য কুড়ি পার করা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণ ছাত্রের "ওয়ান-লাইনার" ও "স্লোগান" ঝড় তুলছিল বিজ্ঞাপন জগতে।বাংলা বিজ্ঞাপন জগতে অনুবাদের পরিবর্তে তার হাত ধরেই প্রথম বাংলা থেকেই শুরু হয়েছিল বাঙালির একান্ত নিজস্ব অ্যাড-ক্যাম্পেনগুলি।"শারদ সম্মান"- ই হোক কিংবা বোরোলিনের সেই সুবিখ্যাত ক্যাচলাইন "বঙ্গ জীবনের অঙ্গ",ঋতুপর্ণ ঘোষ নামের সেই তরুণ তুর্কিটি তখন নিজের প্রতিভা স্ফুরণে মগ্ন।মধ্যবিত্ত বাঙালিদের মধ্যে বিজ্ঞাপন জগতে কার্যত এক বিপ্লব এসেছিল,তার হাত ধরেই।


কিন্তু এমন মহীরুহকে কি আর শুধু বিজ্ঞাপন জগতের মধ্যে দমিয়ে রাখা সম্ভব?তাই ১৯৯২ তে সিনেমার জগতে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটল এই হীরকসম প্রতিভাটির," হীরের আংটি" সিনেমাটির মধ্যে দিয়ে।যদিও তাঁর আসল সিনেম্যাটিক দক্ষতার প্রকাশ ১৯৯৪ এ মুক্তিপ্রাপ্ত "১৯ শে এপ্রিল" ছবিটির মধ্য দিয়েই ঘটেছিল।নিজের পেশায় নিমগ্ন এক মা ও তাঁর মেয়ের সম্পর্কের মধ্য দিয়েই দর্শক বিন্দুমাত্র ভুল করেনি,বাংলা সিনেমার তৎকালীন ক্ষয়িষ্ণু ধ্বংসস্তুপ থেকে ফিনিক্স পাখির মত উঠে আসা সেই প্রতিভাটিকে চিনে নিতে।'৮০ এর দশকের সেই রগরগে ক্লিশে প্রেম আর মেলোড্রামাকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে বড়পর্দার ক্যানভাসে তিনি আঁকতে থাকেন বাস্তবতার ছবি,তাঁর ক্যামেরার রঙ-তুলি কথা বলে যায় বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজের আঁকাবাঁকা সম্পর্ক ও তাঁদের পথগুলির,যা কোন এক অসম্ভব জাদুবলে তিনি পর্দায় ফুটিয়ে তুলতেন অনায়াস দক্ষতায়।


১৯৯৭ এর "দহন" সিনেমাটির মধ্য দিয়ে গার্হস্থ্য হিংসা বা "ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স" -এর এক জ্বলন্ত চিত্র তিনি তুলে ধরলেন পর্দায়।সমাজের প্রতি পদে নারীদের জীবনের সংগ্রাম ও যুদ্ধকে তাঁর মত ফুটিয়ে তুলতে খুব কম পরিচালকই পেরেছেন।সিনেমার পর্দায় নারীসত্তার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে নারীত্বকে উপলব্ধি করার এই অসাধ্য-সাধন একমাত্র তিনিই পেরেছেন।তা-সে ২০০২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত "তিতলি"-ই হোক বা ২০০৩ এর " চোখের বালি", এক নারীর জীবনদর্শনই বরাবর তার সিনেমার মুখ্য উপজীব্য হয়ে উঠেছে।


মধ্যবিত্ত পরিবারের সম্পর্কের টানাপোড়েনও ফ্রেমবন্দী করেছেন তিনি তাঁর "উৎসব" সিনেমাটির মধ্য দিয়ে।আবার অন্যধারার গল্প "আবহমান" বা "খেলা"-র চিত্রায়ণেও তিনি সমান পারদর্শী। চরিত্রকে পর্দায় জীবন্ত করে তোলা যদি এক " আর্টফর্ম" হয়ে থাকে,তাহলে সন্দেহাতীতভাবেই ঋতুপর্ণ ঘোষ ছিলেন তাঁর "আর্টিস্ট"।


অজয় দেবগন,অমিতাভ বচ্চন,ঐশ্বর্য রাই বচ্চন,জ্যাকি শ্রফ বা অর্জুন রামপালের মত বহু মেইনস্ট্রিম অভিনেতাদের সাথে কাজ করলেও কোনোদিনও নিজের সিনেমাকে সেই অর্থে " কমার্শিয়াল" হতে দেননি।গতানুগতিক বলিউডের ক্লিশে চলচ্চিত্রধারাও তাকে কোনোদিনও প্রভাবিত করতে পারেনি।এক বহমান স্রোতস্বিনী নদীর মত তিনিও ছিলেন আপনমনা,যে একান্তভাবেই আপন খেয়ালে নিজের ভাবনা ও মতাদর্শকেই সিনেম্যাটিক এক্সিলেন্সে দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর।


ও,এত শত কথা বলতে বলতে ভুলেই গেছিলাম,দেখতে দেখতে প্রায় সাতটা বছর কেটে গেল,হাত থেকে "হীরের আংটি"-টা খসে পরে গেছে।ভালবাসার কোনো ধর্ম,লিঙ্গ,জাত,শ্রেণী হয় না এমনটাই বিশ্বাস করে এসেছেন এই মানুষটি।ভালবাসা তো তরলের মত,যে পাত্রেই রাখো সেই পাত্রেরই আকার ধারণ করবে,তাতে আবার ভেদাভেদ কিসের।নিজের " চিত্রাঙ্গদা" সিনেমাটির মধ্য দিয়েই তাই তিনি বার্তা দিয়ে গেছেন, সমলৈঙ্গিক প্রেম শুধুই শারীরিক সম্পর্কের মেলবন্ধন নয়,তাতেও থাকে প্রেমের উষ্ণ স্পর্শ, আবেগঘন বাক্যালাপ,মনের প্রগাঢ় অনুভূতিগুলো,আর পাঁচটা সমাজ-নির্ধারিত "স্বাভাবিক" সম্পর্কগুলোর মতই।হোমোফোবিয়ায় আক্রান্ত,ভেদাভেদ, হিংসা ও রক্তের লালসাকে কার্যত নর্মালাইজ করে ফেলা এই সমাজের হাতকড়াকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন,ভালবাসা,তার আবার রূপভেদ কিসের?সে তো শুধুই দুটি আত্মার,দুটি চেতনার এক ঐশ্বরিক মিলন,যা মানবতার সেই মূল চেতনাকেই বহন করে যা বিদ্বেষবিষে জর্জরিত সমাজে বহুকাল পূর্বেই মৃত।নিজের সিনেমার মধ্য দিয়ে তিনি চেয়েছিলেন এক শ্রেণীহীন,বিভেদমুক্ত এক ভালবাসার সমাজ গড়তে।চেয়েছিলেন খুলে দিতে সেই "আত্মানুসন্ধান"-এর পথ,যার রাস্তা আমরা কবেই হারিয়ে ফেলেছি,তার হিসেবও রাখিনি।


তাই সত্যিই আমরা পারিনি।দুই চোখে ধর্মান্ধতার উন্মত্ত আস্ফালনের ঠুলি পরে আমরা মেতে উঠেছি ঘৃণা ও রক্তপাতের এক পাশবিক দাঙ্গায়।আমরা পারিনি বলেই কাঠগড়ায় তুলেছিলাম ঋতুপর্ণের নারীসত্তাকে,তাঁর "চিত্রাঙ্গদা" সিনেমাটিকে।মানুষরূপী দানবের মত পাশবিক আনন্দ পেয়েছিলাম আমরা,এক তথাকথিত "অস্বাভাবিক" পরিচালককে "গে"," হিজড়া" বলার মধ্য দিয়ে,মস্তিষ্কহীন বাংলা সিরিয়ালের জগতে "গানের ওপারে"-র মাধ্যমে রাবীন্দ্রিক ধারার অনুপ্রবেশ ঘটানোর চেষ্টাকে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে,এমনকি মৃত্যুর সময়ও তাঁর " হিজড়ে সাজার প্রচেষ্টা"-কে মৃত্যুর কারণরূপে দেগে দিয়ে।


না,তাঁদের হয়ে আমি আজ ক্ষমা চাইছি না।কারণ তুমিও জানতে তারা তোমাকে ডিজার্ভ করে না,তুমিও জানতে নখদন্তযুক্ত এক ক্ষয়িষ্ণু অচলায়তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এই পথ কখনোই সুগম হবে না।এই লড়াই ততদিনই চলবে যতদিন সেই বহুপ্রচারিত কাল্পনিক "সাম্য ও শ্রেণীহীন সমাজ" বাস্তবায়িত হচ্ছে,বাস্তবায়িত হচ্ছে সেই সব স্বপ্নগুলো,যা তুমি সযত্নে বুনে গেছিলে তোমার ক্যামেরার লেন্সের মধ্য দিয়ে।পরিশেষে শুধু একটাই কথা বলব,যেখানেই থাকো না কেন, এই লড়াইটা থামিয়ো না "ঋতু" দা।


"মেমোরিজ কিলস"-- কিছু রুপালি চিত্র-(আ___) রেখে গেছে

'সে'

তেরোয় ফাঁকা অন্দরমহলে সেদিন


আজ


তেষট্টি x দুই


আরো আলো

তাই আরো থাকো_থেকে যাও


তোমায় তোমার নিশ্বাস

" আজ দরকার সব।"


Template designed by:

0 views0 comments

Recent Posts

See All

Comments


bottom of page